আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান কিছু দৃশপট এবং এর মাহাত্বের সারসংক্ষেপ !!!

লিখেছেন লিখেছেন নান্দিনী ২৫ জুন, ২০১৬, ০৯:০৮:৫৯ রাত

দৃশ্য ১:

মাঠের মধ্যে চলছে জমজমাট আড্ডাবাজি।ছেলেমেয়ে মিলেমিশে একাকার।হাসি-ঠাট্টা-আনন্দ-খুনসুটি-কিলাকিলি-দস্তাদস্তি!সাথে চলছে সেইরাম মিউজিকের গান।ঠিক তখনই পার্শ্ববর্তি

মসজিদ থেকে ভেসে এলো মুয়াজ্জিনের সুর।মেয়েগুলা সাথে সাথে গলায় ঝুলতে থাকা কাপড়ের টুকরা টা মাথায় দিলো।

দৃশ্য:২

সোহেল লাউড স্পিকারে গান শুনতেছে,ওর মা হঠাত্‍ এসে বললেন-"আযান হচ্ছে শুনছ না,সাউন্ড কমায় দে" বিরক্তেরসাথে সাউন্ড কমালো

দৃশ্য:৩

ক্লাশ চলতেছে,স্যার মাইক্রোফোনে কথা বলতেছেন,হঠাত্‍ ক্লাশ থামায়ে বললেন-"আযান শেষ হোক,তারপর আবার শুরু করছি"

দৃশ্য:৪

খেতে বসছে,এমন সময় নানুভাই আসলেন।ঝুমা নানু ভাইকে সালাম দিলো।নানুভাই বললেন "খেতে বসে সালাম দিতে হয়না"

দৃশ্য:৫

স্নেহা বোরকা পড়ে না,তবে ড্রেস আর টপসের সাথে ম্যাচিং করে মাথায় হিজাব পড়ে।কখনো নরমাল ভাবে,আবার কখনো দুর্গের মতো উঁচু করে।সাথে হালকা/কড়া ম্যাকআপ।মাঝে মাঝে অবশ্য স্লিভলেস ফ্যাশন্যাবল বোরকা পড়ে।সে/তার ফ্যামেলির সবাই অনেক "উদার"। সব টাইপের ভাই এর সাথেই খোলামেলা সম্পর্ক।রোড এক্সিড্যান্টে ওর এক কাজিন মারা গেলে,প্রশ্ন ওঠলো "মৃত ভাইকে শেষবারের মতো দেখেতে পারবে না,কারন দেখলে "গোনাহ" হবে

দৃশ্য:৬

পাশের বাসার এক আপু মারাগেছেন।সারাবাড়িতে শোকের মাতম চলছে।একমাত্র দেবর শেষবারের মতো ভাবির মুখ দেখতে চাইলো,ভাবির সাথে ওর কতো সুখ স্মৃতি! মুরব্বিরা নিষেধ করে দিলেন,কারন সে গায়ের মাহরাম।

দৃশ্য:৭

অবশেষে ভাবিকে তার প্রাপ্য দোনমোহর এর টাকা দেওয়া হলো।কারন তালাক দেওয়ার পর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করার দিছেন উপায় নাই!

***

ওপরের দৃশ্যপট থেকে জানতে পারি-

*ছেলেমেয়ে অবাধে মেলামেশা করা যাবে,গোনাহ হবে না,তবে আযান দিলেই মাথায় কাপড় না দিলে গোনাহ হবে।

ইসলামে নতুন কিছুর সংযোজন বিদআত।অনৈসলামিক ভাবে চলাফেরা করলাম,কিন্তু আযান শুনেই মাথায় কাপড় দিলাম।মাথায় কাপড় দেয়া টা কি শুধু আযানের সাথেই সংশ্লিষ্ট?এটা কি ইসলামে নুতুন সংযোজন না? ইসলামে বা শরীয়তে তো এমন বলা নাই কোথাও

*গানবাদ্য শুনা যাবে just আযানের সময় sound একটু কমাই দিলেই হইলো!কিন্তু ইসলামে তো নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের গান ছাড়া বর্তমান সময়ের প্রচলিত গানকে হারাম বলছে।

*বিদ্যার্জন করা ফরজ,জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মাঝে তা থামিয়ে দেওয়া কোন মাহাত্ব জানি না,তবে স্যার যদি কোনো একজন স্টুডেন্ট কে তখন বলেন যে "আযান হচ্ছে তুমি মনে মনে আযানের জবাব দাও"(আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব,সবার পক্ষ থেকে একজন দিলেই হয় as far I know)তাহলে অবশ্যই এটা বিরাট মাহাত্বের কাজ

*খাওয়ার সময় সালাম/সালামের উত্তর দেওয়া যাবে না,As Far I know রাসুল (সাঃ) খেতে বসেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।খেতে বসে অহেতুক কথাবার্তা বলার চাইতে,সালাম দেওয়াটা নিশ্চই খারাপ না

*ড্রেসাপ যাই হোক মাথায় হিজাব দিতে

হবে,এখন এটা একটা ট্র্যান্ড হয়ে গেছে।কিন্তু আত্মিয় পুরুষ কেউ মারাগেলে তাকে দেখলে গোনাহ হবে।

প্রশ্ন হলো কার গোনাহ হবে? সামান্যকিছু পড়াশোনা থেকে জানতে পেরেছি যে,"পর্দা" শব্দটি এসেছে "হিজাব" থেকে,যার অর্থ-"আড়াল,অন্তরাল,প্রাচীর,প্রতিবন্ধক ইত্যাদি।পবিত্র কোরআনে ৭ বার "হিজাব" শব্দটি এসেছে "পর্দার অন্তরালে যাওয়া,অস্তমিত হওয়া,পর্দা/প্রাচীর/দেয়াল ইত্যাদী অর্থে।পর্দা করা মুসলিমদের জন্য ফরয,ছতর ঢেকে রাখাও ফরয।নারীদের হাত পা এর পাতা এবং মুখমন্ডা ব্যতিত সমস্ত দেহই ছতরের অন্তর্ভুক্ত,আর পুরুষের হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত ছতরের অন্তর্ভুক্ত। আর ছতরের অতিরিক্ত ঠেকে রাখাই পর্দা।প্রশ্ন হলো তাহলে এই একটুকরো কাপড় কিভাবে "হিজাব" হয়!

পর্দা করার কথা বলা হয়েছে ১৪জন মাহরাম ব্যতিত সবার সাথে এবং অবশ্যই জীবিত অবস্থায়,কারন মৃত ব্যক্তির সাথে পর্দা করার কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আমার মনে হয় না(তবে ১৪জন মাহরাম ব্যতিত সবার সাথেই পর্দার বিধান)।কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখলে নিশ্চই মৃত্যুভয়টাই কাজ করবে,অন্য খারাপ চিন্তা আসবে না,যে খারাপ চিন্তা থেকে বিরত থাকার জন্যই পর্দার হুকুম।যারা বিভিন্ন দোহাই দিয়ে ইসলামের নির্ধারিত পর্দার বিধান থেকে দূরে থাকেন,তারা এটলিস্ট শালিনভাবে চলাফেরা করতে পারেন,"কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখলে গোনাহ হবে" এটা ওনাদের মুখে হাস্যকার লাগে।এই ধরনের ঘটনা দেখলেই আমার ঐ হাদীস মনে পরে-

একবার আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট একজন লোক মশা মারার বিধান জানতে চাইল।তিনি তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কোন দেশের লোক?সে বলল: ইরাকের। ইবনে উমর (রাঃ) তখন উপস্থিত লোকদেরকে বললেন: দেখো এই লোকটিকে সে আমাকে মশা মারার হুকুম জিজ্ঞেস করছে,অথচ তারা নবী (সাঃ)এর নাতিকে হত্যা করেছে।(বুখারী, হাদীছ নং- ৫৯৯৪)

যদিও এখানে এই লোকটির কোনো দোষ নেই,ঐ ব্যক্তির "মশা মারার" কথা শুনেই মূলত কারবালার ঘটনা মনে আসছে।same here.

আমারা কতো গুরুত্বপূর্ণ ফরয,ওয়াজিব,হালাল,হারাম থেকে গাফেল থাকি,কিন্তু বা ছোটো নফল,সুন্নাত নিয়ে মাঠ গরম করে তুলে,"শবে বরাত,তারাবির নামাজ ৮/২০ রাকাত ইত্যাদি।বেপর্দা চলাফেরা,গীবত করা,অন্যের নিন্দা করা কবিরা গোনাহ এসবে খেয়াল নাই,কিন্তু কে কোন দলের সাপোর্টার,কোন দলের আকিদা বিশ্বাস ঠিক নাই ইত্যাদি নিয়া চা এর কাপে ঝড়।একবারও ভাবি না,আকিদা বিশ্বাস ইমান নিয়া আমার অবস্থান কোথায়?

*আমাদের সমাজে বর্তমানে দেবর-ভাবি,দোলাভাই-শালির যে সম্পর্ক,এটা শরীয়াত সাপোর্ট করে না,দেবর কে তো বলা হইছে "আগুন তুল্য"!দেবর/দোলা ভাই গায়ের মাহরাম,সুতরাং

"বন্যেরা বনে সুন্দর,আর ইমানদার পর্দায় সুন্দর"।শরীর এবং মন উভয়ের পর্দা।

*দেনমোহর ফরয,এটা বিয়ের আকদ সম্পন্ন হলেই পরিশোধ করা উচিত।দেনমোহর পরিশোধ না করলে গোনাহ হবে।স্ত্রীর সাথে বৈধ সম্পর্কই হবে না যদি কেউ মনে করেন যে,মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে হবে না। অথচ আমাদের সমাজে শুধু তালাক দেওয়ার সময়ই দেনমোহরের কথা সামনে আসে।দেনমোহর বিহীন বিয়ের বৈধতাই নাই(যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় মাপ করে দেন,সেটা আলাদা )তাহলে সে বিয়ের সম্পর্কে আল্লাহর রহমত থাকবে কিভাবে।আর দেনমোহর অবশ্যই স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ি হওয়া উচিত।

*আমার ব্যক্তিগত ধারনা প্রসূত লেখা,ভুল হয়ে থাকলে আল্লাহ মাফ করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৯০০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373129
২৫ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৪১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : একবার হাসি পাচ্ছে, আবার সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছি, আবার আমার আর আমার আত্নীয় স্বজনদের মাঝে এসবের মিল পাচ্ছি। সত্যিই বাস্তবধর্মী লেখা খুব সুন্দর লিখেছেন আপু। জাঝাক আল্লাহ।
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০১:১০
309772
নান্দিনী লিখেছেন : আপনার হাসি পাচ্ছে? আর আমার তো মেজাজটাই বিগরে যাচ্ছে,কারন এই সমস্যাগুলা আমার খুব ঘনিষ্টজনদের মধ্যেই দেখছি,সরাসরি কিছু বলতেও পারছি না,হিতে বিপরীত হবে,,ধন্যবাদ পড়ার জন্য,আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন
373131
২৫ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৫০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। সমস্যা হচ্ছে আমরা সবকিছুতেই এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে যাই। সেটা ইসলাম মানতে গিয়ে কিংবা অমান্য করতে গিয়ে
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০১:১৬
309773
নান্দিনী লিখেছেন : এক্সট্রিম পর্যায়ে যাওয়াটাই তো চরম বোকামি।ইসলাম তো সহজ,অনেক সহজ। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
373134
২৫ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : লেখাটা খুব দারুন হল। একেবারে বাস্তব। এটাই ঘটছে সমাজে। ইসলামের জ্ঞান নেই কিন্তু ইসলামকে খানিকটা পছন্দ করে নিজের মত করে। শিক্ষা ব্যবস্থা যদি ইসলামপূর্ণ হত এরা সকলেই জানতে পারত একাযেকিমভাবে। অন্তত বেসিক বিষয় জানত। জাজাকাল্লাহ
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০১:২৫
309774
নান্দিনী লিখেছেন : বেসিক জানার জন্য পরিবারকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।যদিও শিক্ষা ব্যবস্থার করুন দশা,তারপরও বলবো আমাদের কেও এই শিক্ষাব্যবস্থাই মেনে শিক্ষাজীবন শেষ করতে হচ্ছে,আমরা কিন্তু ইসলামিক জ্ঞান,নৈতিকতা পরিবার থেকেই পেয়েছি।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাইতে আমাদের পরিবারেই আমরা বেশি সময় থাকি,পরিবারের ভিত্তি ঠিক হলে ইনশাল্লাহ ভালো হবে,আপনাকে আল্লাহ উত্তম জাযা দান করুন।
373156
২৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৪২
নাবিক লিখেছেন : 'হিজাব' নিয়া আর কী বলবো এইটারে এখন ফ্যাশন বানায়া ফেলছে, শুধু হিজাব ক্যান? বোরকার মইধ্যেও এখন দারণ ফ্যাশন, ফারা-চেরা, কালা-ধলা, লেইসওয়াল আরো কত্তো কী?

বাকী ঘটনাগুলা তো চোখের সামনে হর-হামেশাই ঘটতে দেখছি, সমাজে ভাইরাসের মতো এগুলা ছড়ায়া গেছে।।
২৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৪৬
309779
নাবিক লিখেছেন : কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম হিজাব পড়া নতুন বার্বিডল বাইর হইছে, এই বার্বিডলের নাম দিছে..."হিজার্বী" Big Grin
২৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৫৫
309780
নাবিক লিখেছেন :
এই সেই বার্বিডল, আর পাশের এই হিজাবী ললনা এই বার্বিডলের আবিষ্কারক।
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:০৭
309843
নান্দিনী লিখেছেন : ভাইরাসের মতো ছড়ানোর সুযোগ পাইছে বলেই ছড়াইছে,যথা সময়ে পরিবার ও আশপাশ থেকে যথাযথ প্রতিশেধক পেলে ইনশাল্লাহ ছড়ানো বন্ধ হবে ।
373158
২৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৫৭
নাবিক লিখেছেন :
373183
২৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:১৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন লিখাতে। আল্লাহ আামাদের হিদায়াত দান করুন ।

জাযাকিল্লাহ ।
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:০৩
309842
নান্দিনী লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,আল্লাহ আপনাকেও উত্তম জাযা দান করুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File